খুলনায় আলোচিত বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র অর্ণব হত্যার সাথে জড়িত কেউ গ্রেপ্তার হয়নি। তবে ৩ জনকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
বাবার কনস্ট্রাকশন ব্যবসা, অপরাধ চক্র, চাঁদাবাজি এবং প্রেমঘটিত বিষয় এই চারটি বিষয়কে সামনে রেখে অর্ণব হত্যাকন্ডের তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।
হত্যার পর অর্ণবের বন্ধু রাব্বানীর কোন খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। সে আত্মগোপন করেছে, পুলিশ তাকে খুঁজছে। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ চার রাউন্ড গুলির খোসা উদ্ধার করেছে।
শুক্রবার রাত পৌনে ৯টার দিকে খুলনা নগরীর শেখপাড়া তেঁতুলতলা মোড়ে অর্ণব কুমার সরকারকে গুলি করে এবং কুপিয়ে হত্যা করা হয়। সে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমবিএ’র ছাত্র ছিল।
অর্ণব হত্যা সম্পর্কে জানতে চাইলে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) মো: মনিরুজ্জামান মিঠু খুলনা গেজেটকে বলেন, আলোচিত হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটনে ৪ টি বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত শুরু করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে- চাঁদাবাজি, প্রেমঘটিত বিষয়, বাবার কনস্ট্রাকশন ব্যবসা ও অর্ণব কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য কি না। এই চারটি বিষয়কে প্রাথমিক কারণ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে বলে তিনি জানান।
মো: মনিরুজ্জামান মিঠু বলেন, হত্যাকান্ডের তথ্য জানার জন্য রাতভর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালানো হয়। এসময়ে তিনজনকে হেফাজতে নিয়ে তাদের কাছ থেকে তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করার জন্য জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তাদের দেওয়া তথ্যের ওপর নির্ভর করে হত্যাকান্ডের তদন্ত সামনের দিকে নিয়ে যাবে পুলিশ।
তিনি আরও বলেন, একটি ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর অনেকগুলো ডালপালা বের হয়। কিন্তু কেউ তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করে না। অনেকে বলেছেন নিহত অর্ণব খুলনার শীর্ষ সন্ত্রাসী গ্রেনেড বাবুর ‘বি কোম্পানীর’ সদস্য। কেউ বলছেন অর্ণব কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য। আবার তার বাবার ব্যবসা কেন্দ্রীক বিরোধ নিয়ে তথ্য দিচ্ছেন। তাছাড়া প্রেমঘটিত বিষয়টিও সামনে আসছে। ফলে এখনই ঘটনার নেপথ্যের কারণ বলা সম্ভব নয়।
বাড়ি থেকে একজন যুবক অর্ণবকে ডেকে শেখপাড়া তেঁতুলতলা মোড়ে নিয়ে এসেছে বলে যেটি শোনা যাচ্ছে, সে সম্পর্কে মো: মনিরুজ্জামান মিঠু বলেন, এমন তথ্য আমরাও শুনেছি, এব্যাপারে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। তবে নিহত অর্ণব কেন তেঁতুলতলা মোড়ে এসেছিল তা কেউ সুনির্দিষ্ট করে বলতে পারছেনা।
এদিকে এ হত্যাকান্ডের ব্যাপারে একাধিক তথ্য পাওয়া গেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সংস্থা ও গোপন সূত্রগুলো জানায়, একটি বিষয় বেশ জোরে শোরে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। সেটি হল হত্যাকারীদের সাথে নিহত অর্ণবের সখ্যতা ছিল। তাহলে কেন তাকে প্রথমে গুলি ও পরে কুপিয়ে হত্যা নিশ্চিত করল? এ প্রশ্নের জবাবে আছে হত্যার মোটিভ।
সূত্রটি জানায়, হত্যার মিশনে ৭ সন্ত্রাসী ছিল। তাদের প্রত্যেকের মুখ মাফলার দিয়ে ঢাকা ছিল। তাদের একজনের হাতে শর্টগান ও বাকীদের হাতে ধারালো অস্ত্র ছিল। শর্টগান হাতে থাকা সন্ত্রাসী তাকে লক্ষ্য করে একটি ও পিস্তল দিয়ে পরপর ৩টি গুলি করে। উপস্থিত অন্যান্য সন্ত্রাসীরা তাকে ধারালো অস্ত্রদিয়ে কুপিয়ে জখম করে। হত্যাকারীরা তার মৃত্যু নিশ্চিত করে মোটরসাইকেলে চড়ে সাধারণ যাত্রীদের মধ্যে হারিয়ে যায়।
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) মো: মনিরুজ্জামান মিঠু খুলনা গেজেটকে বলেন, পুলিশের কাছে আসা প্রাথমিক তথ্য বলছে এ হত্যা মিশনে প্রথমে তিনটি মোটরসাইকেলযোগে আসে সন্ত্রাসীরা। এরপর আরও কয়েকটি মোটরসাইকেল যোগে মহড়া দিয়ে আতংক সৃষ্টি করা হয়। আমরা ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করেছি। সেগুলো দেখা হচ্ছে। প্রতক্ষ্যদর্শীদের বক্তব্য নেওয়া হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করা একজন পথচারী বলেন, খুবি ছাত্র অর্ণব রাত সাড়ে ৮ টার দিকে ঘটনাস্থলে বন্ধুদের সাথে দাড়িয়ে চা পান করছিলেন। এ সময়ে কয়েকজন সন্ত্রাসী তাদের ঘিরে ফেলে। তখন অর্ণব তাদের উদ্দেশ্যে বলতে থাকেন ‘আমি এর সাথে জড়িত নই’। এ কথা বলার পর একজন সন্ত্রাসী বলে, তুই তো ওই গ্রুপের সদস্য। একথা বলা মাত্র শর্টগান দিয়ে গুলি করে ওই সন্ত্রাসী। তারপর জনগণ ছত্রভঙ্গ করতে পরপর আরও ৩ রাউন্ড গুলি করা হয়। শর্টগানের একটি ও পিস্তলের তিন রাউন্ড গুলির খোসা উদ্ধার করেছে সোনাডাঙ্গা থানা পুলিশ।
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার আরও বলেন, হত্যাকান্ডের রহস্য খুব দ্রুত উন্মোচন হয়ে যাবে। খুলনায় সন্ত্রাসীদের দৌরত্ম বৃদ্ধি পেয়েছে স্বীকার করে তিনি বলেন, এতদিন সন্ত্রাসীদের ওপর আমরা নজর রাখতাম, কিন্তু এখন তারা আমাদের গতিবিধি নজরে আনছে। তাদের দমনে হোন্ডা বাহিনী, চেকপোষ্ট ও গোয়েন্দা বাহিনী নিয়োজিত করা হয়েছে। খুব শিগগিরিই অপরাধ প্রবণতা কমে যাবে বলে পুলিশের এ উর্ধতন কর্মকর্তা মনে করেন।
খুলনা গেজেট/এমএম